মঙ্গলবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের এপ্রিল মাসের CPI প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হেডলাইন ইনফ্লেশন কমেছে এবং কোর ইনফ্লেশন স্থির রয়েছে। প্রতিবেদনের বেশ কয়েকটি উপাদান প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল ছিল, কিন্তু ডলার এই প্রতিবেদনের ফলাফল দ্বারা খুব একটা প্রভাবিত হয়নি। EUR/USD পেয়ারের মূল্য কয়েক ডজন পিপস বেড়ে 1.11 রেঞ্জে স্থির রয়েছে, আর ডলার সূচক ধীরে ধীরে 101.00 লেভেলের দিকে সরে আসছে।
তবে বিষয়টি কেবল CPI প্রতিবেদনেই সীমাবদ্ধ নয়—বাস্তবতা হলো, মার্কেটের ট্রেডারদের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের সাময়িক বিরতির খবরে যে উচ্ছ্বাস ছিল, তা এখন মিলিয়ে যাচ্ছে। সেই উচ্ছ্বাসের জায়গা নিচ্ছে "হ্যাংওভার"—কারণ তারা এখন বুঝতে পেয়েছে, এই বিরতি সাময়িক এবং মূল আলোচনা কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, EUR/USD-এর বিক্রেতারা দ্রুত বিক্রি করে মুনাফা নিয়ে নিচ্ছে, যার ফলে নিম্নমুখী মুভমেন্ট থেমে গেছে। যদিও CPI প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তবে আগের দিনের ঘটনাগুলোই ট্রেডারদের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে।
তবুও এই প্রতিবেদনের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না—এটি এপ্রিল মাসের মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরেছে, যখন নতুন শুল্কগুলো ইতোমধ্যেই কার্যকর ছিল। কিছু বিশ্লেষকের আশঙ্কা অনুযায়ী ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়নি, অন্তত এপ্রিল পর্যন্ত। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব মে কিংবা জুন–জুলাই মাসে আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। CPI প্রতিবেদন প্রতি ট্রেডারদের নিস্পৃহ প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যায়, এই মতামতই বর্তমানে প্রাধান্য পাচ্ছে।
প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্তসার:
হেডলাইন কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা ভোক্তা মূল্য সূচক এপ্রিল মাসে বার্ষিক ভিত্তিতে 2.3%-এ পৌঁছেছে, যা মার্চের 2.4%-এর তুলনায় কম এবং ট্রেডারদের প্রত্যাশার নিচে। মূলত CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক টানা তিন মাস ধরে হ্রাস পাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে জানুয়ারিতে এই সূচক 3.0%-এ ছিল এবং এখন তা ফেডের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে।
কোর ইনফ্লেশন ইনডেক্স (খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দিয়ে বিবেচিত) বরাবরের মতোই অপরিবর্তিত ছিল। কোর CPI এপ্রিলেও বার্ষিক ভিত্তিতে 2.8%-এ স্থির ছিল, যা বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে—খাদ্যদ্রব্যের দাম মার্চে 3.0% থেকে কমে 2.8%-এ নেমে এসেছে। পরিবহন সেবার মূল্যবৃদ্ধিও কমে এসেছে ( 3.1% থেকে 2.5%-এ নেমে এসেছে)। এপ্রিল মাসে জ্বালানির দাম 3.7% হ্রাস পেয়েছে (যেখানে পেট্রোলের দাম 12% কমেছে এবং মার্চে 9.8% কমেছিল)। নতুন গাড়ির দাম 0.3% বেড়েছে, এবং ব্যবহৃত গাড়ির দাম 1.5% বেড়েছে।
এর মানে কী দাঁড়ায়?
যদি যুক্তরাষ্ট্র এই শুল্কযুদ্ধ শুরু না করত, তাহলে CPI প্রতিবেদন ফেডের পরবর্তী সুদহার হ্রাসের প্রত্যাশাকে এগিয়ে আনতে পারত। তবে, যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে, এখনকার মূল ধারণা হলো—এই শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব পরে ধরা পড়বে, বিশেষ করে এই গ্রীষ্মে, যদি তা বহাল থাকে।
হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন 115% হারে পারস্পরিক শুল্ক হ্রাসে সম্মত হয়েছে, কিন্তু এখনও চীনা পণ্যের উপর 30% মার্কিন শুল্ক কার্যকর রয়েছে, যা অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই চুক্তির আওতায় মার্চে ট্রাম্পের আরোপিত খাতভিত্তিক শুল্ক বা তার প্রথম মেয়াদের শুল্ক অন্তর্ভুক্ত নয়। তাছাড়া ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত পণ্যের উপর এখনও 10% শুল্ক রয়েছে—যেখানে গাড়ি, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের উপর 25% পর্যন্ত শুল্ক বহাল রয়েছে। এমনকি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে "ডি ফ্যাক্টো" চুক্তির মাধ্যমেও শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়নি—10% শুল্ক এখনো বহাল আছে।
এই প্রেক্ষাপটে আগামী কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সম্ভাবনা নিয়ে ট্রেডারদের উদ্বেগ যুক্তিযুক্ত, এবং এর মাধ্যমেই CPI প্রতিবেদনের প্রতি ট্রেডারদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়।
EUR/USD পেয়ারের পূর্বাভাস
মার্কিন ডলারের বিপরীতে EUR/USD পেয়ারের নতুন করে প্রবল দরপতন শুরু হতে হলে বিক্রেতাদের জন্য নতুন কোনো কারণ প্রয়োজন—যেমন, মার্কিন-চীন আলোচনা সম্পর্কিত নির্দিষ্ট সময়সূচি বা এজেন্ডা প্রকাশ। বর্তমানে মার্কেটে তথ্যশূন্যতা বিরাজ করছে—যদিও উভয় দেশ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে, তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। আলোচনার শুরু হওয়ার খবর ইতিমধ্যেই মূল্যায়ন করা হয়েছে, তাই নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রাখতে EUR/USD পেয়ারের নতুন কিছু দরকার। এই তথ্যশূন্য পরিস্থিতিই ডলারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং EUR/USD পেয়ারকে 1.11 রেঞ্জে কারেকশন করার সুযোগ দিচ্ছে।
EUR/USD বিক্রি করা তখনই যৌক্তিক হবে, যদি বিক্রেতারা মূল্যকে দিয়ে 1.1120 সাপোর্ট লেভেলের (ডেইলি চার্টের নিচের বলিঙ্গার ব্যান্ড) ব্রেক ঘটায় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, তার নিচে কনসোলিডেট হয় (অর্থাৎ, 1.10 রেঞ্জে প্রবেশ করে)। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী বিয়ারিশ মুভমেন্টের লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1050 (H4-এর নিচের BB) এবং 1.0920 (D1-এর আপার কুমো ক্লাউড বাউন্ডারি)।
যদি আলোচনা থেমে যায় বা মতপার্থক্য দেখা দেয়, তাহলে মার্কেটে আবারও মার্কিন অর্থনৈতিক স্থবিরতার আশঙ্কা ফিরে আসবে, যা ডলারের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেবে। তাই স্বল্পমেয়াদে যদি 1.1120 লেভেল ব্রেক না হয়, তাহলে লং পজিশন বিবেচনা করা যেতে পারে, যার প্রথম লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.1230—যেখানে দৈনিক চার্টে টেনকান-সেন ও কিজুন-সেন লাইন একত্রিত হয়েছে।