মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবৃতি দিয়েছেন যে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন, যদিও কোনো পূর্ণাঙ্গ চুক্তি নাও স্বাক্ষরিত হতে পারে—এরপর মার্কিন স্টক মার্কেটে এবং মার্কিন ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, তিনি চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির স্থগিতাদেশ আরও দীর্ঘায়িত করতে চান যদি শি আবারও আমেরিকান সয়াবিন কেনা শুরু করেন, ফেন্টানিলের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেন এবং বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর থাকা বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেন—তবে যেসব বাণিজ্য শুল্ক ট্রাম্প প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন, সেগুলো বহাল থাকবে।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, "আমার মনে হয় আমরা সব বিষয়ে একটা চুক্তি করতে পারব।"
এই বিবৃতি, যা আসন্ন বৈঠক শুরু হওয়ার আগে গৃহীত অবস্থান স্পষ্ট করতে চাওয়ার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে, মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একদিকে, আমেরিকান কৃষকদের ওপর বাণিজ্য যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব লাঘব করতে মার্কিন সয়াবিন সরবরাহ পুনরায় শুরুর প্রস্তাবটিকে একটি ছাড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, ফেন্টানিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং বিরল খনিজ পদার্থের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি শুধু বাণিজ্য খাতের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়—এগুলো জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের সাথে জড়িত।
বিরল খনিজ পদার্থের বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল, কারণ এই উপাদানগুলো ইলেকট্রনিক্স, ব্যাটারি এবং উচ্চ-প্রযুক্তিগত পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই বাজারের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ দেশটিতে এক বিশাল কৌশলগত সুবিধা দিয়েছে, এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে বেইজিংয়ের অবস্থান দুর্বল হতে পারে।
ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্রচুক্তিরও প্রস্তাব দিয়েছেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য শিকে রাজি করানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন, যে লক্ষ্য সম্ভবত অর্জনযোগ্য নয়।
তবে ট্রাম্পের চুক্তির প্রতি আগ্রহ প্রায়শই উপস্থাপন ও প্রচারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়, বিষয়বস্তু নয়—এবং বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় আসন্ন সামিটে স্বাক্ষরিত যেকোনো চুক্তি মূলত সপ্তাহব্যাপী উত্তেজনা, পাল্টা শুল্কনীতি ও কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষাপটে অনিশ্চয়তা কমানোর একটি কৌশল হবে মাত্র এবং মূল বিরোধের পূর্ণাঙ্গ সমাধান নিয়ে আসবে না।
এটি স্পষ্ট যে উভয় পক্ষই পারস্পারিক সম্পর্কের মধ্যে স্থিতিশীলতা চায়, তবে এই স্থিতিশীলতা কী শর্তে অর্জিত হবে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। ট্রাম্প বিজয় হিসেবে তুলে ধরার মতো ফলাফল পেতে মরিয়া হয়ে রয়েছেন, যা এক ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, যার ফলে তিনি চীনের কিছু মূল দাবিতে ছাড় দিতে পারেন—যেমন উন্নতমানের সেমিকন্ডাক্টর অ্যাক্সেস এবং স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানের মর্যাদা। ট্রাম্প এমন ছাড় দেয়ার বিষয়টি নাকচ করেননি। তারপরও, জাতীয় নিরাপত্তা এবং দেশীয় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় এসব বিষয়ে বড় ধরণের ছাড় দেয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে এমন কোনো বড়মাপের চুক্তির আশঙ্কাও কম, যা নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানো যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য যে, বর্তমান দ্বিপাক্ষিক শুল্কচুক্তির মেয়াদ নভেম্বর মাসে শেষ হচ্ছে।
অনেক বিশ্লেষকের মতে, নেতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, এই বাণিজ্য সংঘাত দুই দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যাচাই করে নিচ্ছে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমেরিকান ভোক্তা পণ্যের দাম বাড়ছে এবং চীনের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজারে প্রবেশাধিকার হ্রাস পাচ্ছে।
বর্তমানে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটের অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও, এই স্থিতিশীলতা সম্ভবত ধরে রাখা যাবে না—বিশেষ করে বহুল প্রতীক্ষিত মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন প্রকাশের পর।
EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
বর্তমানে, ক্রেতাদের জন্য অবশ্যই এই পেয়ারের মূল্যের 1.1620 লেভেলটি ব্রেক করিয়ে মূল্যকে ঊর্ধ্বমুখী করা প্রয়োজন। কেবল তখনই তারা এই পেয়ারের মূল্যের 1.1650 লেভেল টেস্ট করানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1700 পর্যন্ত উঠতে পারে, যদিও মার্কেটের ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি অর্জন করা কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1725 লেভেল। যদি এই পেয়ারের দরপতন হয়, তাহলে মূল্য 1.1590-এর আশেপাশে থাকা অবস্থায় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার আশা করা যায়। যদি সেখানে ক্রেতারা সক্রিয় না হয়, তাহলে 1.1545 লেভেল পুনরায় টেস্ট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা অথবা 1.1500 থেকে লং পজিশন ওপেন করা উচিত হবে।
GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রথম কাজ হবে নিকটতম রেজিস্ট্যান্স 1.3350 লেভেল ব্রেক করিয়ে মূল্যকে ঊর্ধ্বমুখী। কেবল তখন তারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3385-এর দিকে নিয়ে যেতে পারবে, যদিও এই লেভেল অতিক্রম করা যথেষ্ট কঠিন হতে পারে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.3420 লেভেল। যদি এই পেয়ারের মূল্য হ্রাস পেতে শুরু করে তাহলে বিক্রেতারা মূল্যকে 1.3315 লেভেলে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। যদি তারা তাতে সফল হয়, তাহলে সেই রেঞ্জ ব্রেক করলে সেটি বুলিশ পজিশনের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা হবে এবং এই পেয়ারের মূল্য 1.3280-এ নামতে পারে, যার মাধ্যমে 1.3250 পর্যন্ত দরপতন বিস্তৃত হতে পারে।