নেতৃস্থানীয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের মূল্যের বর্তমান অবস্থান ধরে রাখার জন্য লড়াই পরিলক্ষিত হচ্ছে, যদিও এই পথ সর্বদা মসৃণ নয়। বর্তমানে BTC সামান্য সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে, যা উচ্চমূল্য টিকে থাকার কাজকে কিছুটা সহজ করছে।
সোমবার, ১৯ মে বিটকয়েনের মূল্য জানুয়ারি ২০২৫-এর শেষের পর প্রথমবারের মতো $107,000 এর ওপরে উঠে যায়, যা বৈশ্বিক লিকুইডিটির ঊর্ধ্বগতির ফলে সৃষ্ট ইতিবাচক মোমেন্টামের কারণে হয়েছে। তবে এই উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পরে BTC প্রায় $102,905 মূল্যে ট্রেড করা হয়েছে, একটি নতুন স্থানীয় উচ্চতায় পৌঁছানোর পরেও মূল্য সেখানে স্থিতিশীল হতে পারেনি।
সাম্প্রতিককালে পরিলক্ষিত ক্রিপ্টো মার্কেটের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফিউচার কনট্রাক্টে $652 মিলিয়নের বেশি লিকুইডেশন ঘটিয়েছে, যেখানে লং পজিশনধারীরাই সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বর্তমানে বিটকয়েনের মার্কেট ডমিনেন্স 63.89%-এ দাঁড়িয়েছে।
BTC-এর মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
গত সপ্তাহজুড়ে BTC মূলত কনসোলিডেশন ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল, যদিও ক্রিপ্টো মার্কেটে বেশ কয়েকটি ইতিবাচক বিষয় ছিল। কয়েনটির মূল্যের সাইডওয়েজ মুভমেন্ট দেখা গেছে, এক পর্যায়ে মূল্য $103,186 পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল, পরে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফিরে এসেছে।
সারা সপ্তাহ BTC $100,718 থেকে $105,819 রেঞ্জের মধ্যে ট্রেড করেছে, যা অ্যাকিউমুলেশন বা রিডিস্ট্রিবিউশন ফেজের ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির খবরে বিটকয়েনের মূল্যের রিবাউন্ড হয়। তবে, এটির মূল্য $105,000–$105,500 এর রেজিস্ট্যান্স রেঞ্জ ব্রেক করে উপরের দিকে যেতে ব্যর্থ হয়। বৃহস্পতিবার, ১৫ মে BTC-এর মূল্য ০.২৫% বেড়ে $103,763-এ পৌঁছায়, যা আংশিকভাবে এরিক ট্রাম্পের বিটকয়েন অ্যাকিউমুলেট করার পরিকল্পনা এবং আমেরিকান বিটকয়েন নামক একটি মাইনিং কোম্পানি চালুর ঘোষণার পর সমর্থন পায়।
বর্তমানে $100,000 লেভেলের কাছাকাছি একটি সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট লেভেল গঠিত হয়েছে, যখন ক্রিটিক্যাল লেভেল হল $98,500। এই লেভেল ব্রেক করে মূল্য নিচের দিকে গেলে $95,000 পর্যন্ত আরও গভীর কারেকশনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, "মার্কেটের ট্রেডাররা যদি ইতিবাচক মৌলিক সংকেত উপেক্ষা করে, তাহলে এটা এই ইঙ্গিত হতে পারে যে বড় ট্রেডাররা লং পজিশনে প্রফিট নিচ্ছে।" তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের তরফ থেকে ক্রিপ্টো সেক্টরের প্রতি সমর্থনের কারণে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি এখনো ইতিবাচক রয়েছে।
এই সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন
চলতি সপ্তাহে ট্রেডাররা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের দিকে দৃষ্টি দেবে, যেগুলো প্রধান স্টক সূচক এবং ক্রিপ্টো মার্কেটকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার সংক্রান্ত তথ্য—ইনিশিয়াল জবলেস ক্লেইম ও কন্টিনিউয়িং ক্লেইমস—যা বৃহস্পতিবার, ২২ মে প্রকাশিত হবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী 232,000 নতুন ক্লেইমস আসবে, যা শ্রমবাজারের স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।
প্রতিবেদনের এই ধরনের ফলাফল ফেডের কঠোর মুদ্রানীতির প্রত্যাশাকে সমর্থন করলে ডলার শক্তিশালী হতে পারে। এছাড়া, ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস এবং S&P গ্লোবাল কম্পোজিট ইন্ডেক্সের পিএমআই প্রকাশিত হবে। এই প্রতিবেদনগুলোর শক্তিশালী ফলাফল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেবে এবং ডিজিটাল অ্যাসেটের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে সমর্থন যোগাবে।
চলমান অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, এখনো BTC-র মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে—বিশেষ করে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমন, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস এবং ফেডের নীতিগত অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনার মতো মৌলিক অনুকূলতাগুলোর পটভূমিতে।
বিটকয়েনের মূল্যের আরও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে
ইতিবাচক মৌলিক প্রেক্ষাপটের মধ্যেও ক্রিপ্টো মার্কেট প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে, তবে নতুন বুলিশ সাইকেল শুরু করতে হলে আরও নতুন উদ্দীপকের প্রয়োজন হবে।
গত সপ্তাহে BTC-এর মূল্য মূলত $101,000 থেকে $105,000 রেঞ্জের মধ্যে ছিল, যা ব্রেক করতে চেষ্টা করা হলে মূল্য সেই লেভেলের ওপরে স্থায়ী হতে পারেনি। তবুও মার্কেটে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, BTC-এর মূল্য সামনের কয়েকদিন এই রেঞ্জেই থাকতে পারে। যদি আশাব্যঞ্জক দৃশ্যপট বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বিটকয়েনের মূল্য $105,000 এর লেভেল ব্রেক করে ওপরে স্থির হতে পারে।
বিটকয়েনের মূল্য বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে এখনো সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ৯০ দিনের জন্য ১১৫% আমদানি শুল্ক কমানোর চুক্তির খবরকে স্বাগত জানিয়েছে। ট্রাম্প একইসাথে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি শুল্ক চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। মার্কেটের ট্রেডাররা আশা করছেন, এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের সমাপ্তির সূচনা হবে, যা গত কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
তবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতি আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে, তাহলে BTC-এর মূল্য আবার $100,000-এ নেমে যেতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের যেকোনো ইঙ্গিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঝুঁকি গ্রহণের আগ্রহ বাড়াবে এবং এটি ক্রিপ্টো মার্কেটকে সমর্থন দেবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন কোনো বড় ধরনের অপ্রত্যাশিত খবরের অনুপস্থিতিতেও বিটকয়েনের মূল্য উচ্চ লেভেলগুলোর ব্রেকথ্রু ঘটাতে সক্ষম। তবে BTC-এর উচ্চ মূল্য ধরে রাখার
বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। ক্রিপ্টো মার্কেটের এই প্রধান অ্যাসেটের মূল্যের মুভমেন্ট এখনো বাণিজ্য আলোচনা সংক্রান্ত খবর এবং জুনে অনুষ্ঠিতব্য ফেডের বৈঠকের ফলাফলের প্রত্যাশার উপর নির্ভর করছে।