নতুন সপ্তাহ সম্ভবত মার্কিন ডলার এবং ইউরোর জন্য বেশ অনেকগুলো অবাক করা খবর নিয়ে আসতে পারে। এখন পর্যন্ত, ইউরো এটির সিংহভাগ মুনাফা হারিয়েছে, এবং মার্কিন ডলারও আসন্ন ডি-ডলারাইজেশন সম্পর্কিত আলোচনা থেকে মনোযোগ দূরে সরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং বেশ অনেক অঞ্চলে এটির গুরুত্ব কমতে যাচ্ছে।
মার্কিন মুদ্রা অদূর ভবিষ্যতে পতন সম্পর্কিত অবিরাম বিবৃতি সহ্য করে যাচ্ছে। একই সময়ে, বিশেষজ্ঞরা এই জাতীয় পরিস্থিতিকে বাতিল করে দিচ্ছেন না, তবে মার্কিন ডলার এমন বিপর্যয়মূলক অবস্থায় পড়বে না যেমনটা বাজারের অনেক ট্রেডাররা আগে থেকে ধারণা করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের বর্তমান আধিপত্য নতুন বৈশ্বিক মুদ্রার উত্থানের হুমকির সম্মুখীন। রাশিয়া, চীন এবং ইরানের মধ্যে বাণিজ্য কার্যক্রমে নতুন বৈশ্বিক মুদ্রা ব্যবহৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত এই ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দিতে পারে।
বর্তমানে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কঠোরকরণের ফলে "অপদস্থ" রাষ্ট্রগুলো কিছু উপায় খুঁজতে বাধ্য হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক ট্রেড ইউনিয়ন তৈরি করা। রাশিয়া, ইরান এবং চীনের মতো অনেক দেশ এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা রাষ্ট্রগুলো পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে যেকোন উপযুক্ত মুদ্রা বেছে নিতে পারে। এই ধরনের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে মার্কিন ডলার বা গ্রিনব্যাক প্রভাবশালী ভূমিকা খর্ব হবে। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত যে নতুন বৈশ্বিক উত্থানের ফলস্বরূপ মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক চাহিদা দ্রুত হ্রাস পাবে।
এই সমস্যাগুলো অদূর ভবিষ্যতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে। তবে, ইউরোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এখন মার্কিন ডলার বা গ্রিনব্যাক আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে রয়েছে। সোমবার, 18 এপ্রিল সকালে, ফেডারেল রিজার্ভের মূল সুদের হারের প্রাথমিক বৃদ্ধির প্রত্যাশার মধ্যে মার্কিন মুদ্রা ইউরোপীয় মুদ্রার বিপরীতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে। EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.0790 এর কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা সাম্প্রতিক সপ্তাহের একটি অন্যতম সর্বনিম্ন স্তর। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন মধ্য মেয়াদে ইউরোর অবস্থান পুনরুদ্ধার করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে গত সপ্তাহের শেষে দেখা ইউরোতে শর্ট পজিশনে আক্রমনাত্মক বিনিয়োগের মূল কারণ হল ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হতাশাজনক কৌশল। মনে রাখবেন যে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডের বিপরীতে এখনও ক্রিয়াকলাপে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। একই সময়ে, বাজারের ট্রেডাররা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পটভূমিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বেশি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে বলে আশা করছিলেন। ইসিবি-এর গৃহীত ডোভিশ বা রক্ষণাত্নক কৌশল ইউরোর অবস্থানকে ভঙ্গুর করেছে এবং মিডিয়াম ও লং টার্ম পজিশনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি ইউরোর বুলিশ প্রবণতা পুনরুদ্ধার করার ইঙ্গিত দিচ্ছে না, যা ইসিবিকে সম্পদ ক্রয় কর্মসূচির হ্রাসকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করেছিল। যাইহোক, ইসিবি মুদ্রানীতি কঠোর করার জন্য কোন তাড়াহুড়ো করছে না, এবং এটি বাজারকে বিভান্তিতে রেখেছে। বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদের ইসিবি এবং ফেডে কৌশলের মধ্যে ভিন্নতার কারণে EUR/USD পেয়ার চাপের মধ্যে থাকবে। একই সময়ে, জুলাই মাসে ইসিবি সুদের হারে সম্ভাব্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলে আর্থিক নীতির বিষয়ে ফেডের সাথে ব্যবধান কমানোর সম্ভাবনা নেই।
এই পটভূমিতে, মার্কিন মুদ্রা বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় হাতিয়ার। সম্ভাব্য বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট যা বিশ্বব্যাপী অর্থব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিতে পারে তাও মার্কিন ডলারের উপর খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যবৃদ্ধি মার্কিন ডলারের শক্তিশালীকরণকে বাড়িয়ে দেয়, যা ফেডারেল রিজার্ভকে আর্থিক নীতিমালা আরও কঠোর করার জায়গা দেয়।
মার্কিন মুদ্রা ফেডের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে সুদের হার বৃদ্ধির প্রত্যাশা থেকে সমর্থন পেয়েছে। যাইহোক, ডি-ডলারাইজেশন এবং এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের সম্ভাব্য প্রত্যাখ্যান সম্পর্কিত বিবৃতির কারণে মার্কিন ডলার বা গ্রিনব্যাকের বর্তমান পজিশনগুলো কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। এই পটভূমিতে, অনেক বড় তহবিল মার্কিন ডলারে শর্ট এবং লং পজিশন বৃদ্ধি করেছে। গত সপ্তাহে, ডলারের শর্ট পজিশনের মূল্য 60% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের ভলিউম গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা নিশ্চিত এই প্রবণতার ধারাবাহিকতা মার্কিন মুদ্রার দরপতনে অবদান রাখবে।