মার্কিন ডলারের বিপরীতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইউরোপীয় মুদ্রার দর বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ বোর্ড সদস্য ইসাবেল স্ন্যাবেল গতকাল বলেন, তিনি নিকট ভবিষ্যতে সুদের হার বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। মনে করিয়ে দিই, গত সপ্তাহের শুরুতে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেছিলেন, যেখানে তিনি সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেননি।
তার সর্বশেষ মন্তব্যের পর, যার ফলে অনেক বিনিয়োগকারী আগামী বছর সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনায় বেশি আস্থা প্রকাশ করছিলেন, স্ন্যাবেল স্পষ্ট করে বলেন যে তিনি "সুদের হার বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা" সম্পর্কে কিছু বলেননি। সোমবার প্রকাশিত এক পডকাস্টে তিনি বলেছেন: "বর্তমানে এমন কোনো পূর্বাভাস নেই যে আগামী দিনগুলোতে সুদের হার বাড়ানো হবে।" তিনি আরও যোগ করেছেন, "যদি কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, তাহলে সুদের হার দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থির থেকেই যেতে পারে।"
ইসিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এই ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ফরেক্স মার্কেটে বেশ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগকারী ও ট্রেডাররা এই সংকেতগুলোর প্রকৃত অর্থ বোঝার চেষ্টা করছেন। একদিকে, ইউরোর মূল্যের শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এই সংকেত দেয় যে ট্রেডাররা ইউরোজোনে আরও কঠোর মুদ্রানীতির সম্ভাবনা দেখছে। অন্যদিকে, স্ন্যাবেলের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে ইসিবি সম্ভবত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কায় হঠাৎ করে সুদের হার না বাড়ানোর পথেই এগোচ্ছে।
মূলত বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ইসিবির অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ইসিবি বোর্ডের কিছু সদস্য মনে করেন, ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে এবং এখনই সুদের হার পরিবর্তনের তেমন প্রয়োজন নেই। অন্য একটি পক্ষ আবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্থরতার আশঙ্কায় ইসিবির কাছ থেকে আরও সতর্ক নীতিমালা প্রণয়নের প্রত্যাশা করছেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে, ইসিবির এমন বিবৃতির দোলাচল কারেন্সি মার্কেটে অতিরিক্ত অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে ট্রেডারদের নিজেদের পূর্বাভাস বারবার সংশোধন করতে হয় এবং মার্কেটের পরিবর্তনশীল অবস্থায় মানিয়ে নিতে হয়।
সম্প্রতি অনেক কর্মকর্তাই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে তারা বর্তমান সুদের হার নিয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে, যেটিকে তারা "আদর্শ মান" বলে মনে করছেন—একদিকে মুদ্রাস্ফীতি ২%-এর লক্ষ্যমাত্রায় ফিরে এসেছে, অন্যদিকে ইউরোজোনের ২০টি দেশের অর্থনীতি মন্থর গতিতে হলেও প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করছে।
স্ন্যাবেল স্পষ্ট করে বলেন, "আমি বলিনি যে সুদের হার বাড়ানো উচিত। বরং, আমি বলতে চেয়েছি এখন সুদের হার আবারও কমানো উচিত নয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্থক্য।"
EUR/USD-এর বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুসারে, ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যের 1.1780 লেভেল ব্রেক করার দিকে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। শুধুমাত্র তখনই এই পেয়ারের মূল্যের 1.1800 লেভেল টেস্ট করার সুযোগ তৈরি হবে। তারপরে এই পেয়ারের মূল্য 1.1830-এর দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে বড় ট্রেডারদের সহায়তা ছাড়া এটি করা বেশ কঠিন হবে। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.1865 লেভেল বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে আমার মতে বাস্তবিক অর্থে কেবল মূল্য 1.1750 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় ক্রয়ের প্রবণতা দেখা যাবে। যদি সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্রেতারা সক্রিয় না থাকেন, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1730 এর নিচে নেমে যাওয়ার অপেক্ষা করা যেতে পারে অথবা সরাসরি 1.1705 লেভেল থেকে লং পজিশনে এন্ট্রি করা যেতে পারে।
GBP/USD-এর বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের মূল্যকে নিকটতম রেজিস্ট্যান্স 1.3490 লেভেল ব্রেক করানো। তখনই ক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3525-এর লক্ষ্যমাত্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যে লেভেলটি অতিক্রম করে মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী হওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.3560 লেভেল বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি এই পেয়ারের মূল্য হ্রাস পায়, তাহলে মূল্য 1.3455 রেঞ্জে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের চেষ্টা করবে। তারা যদি এই লেভেল সফলভাবে ব্রেক করাতে সক্ষম হয়, তবে এটি ক্রেতাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3415 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এরপর 1.3375 পর্যন্ত আরও দরপতন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।