প্রায় সব অর্থনীতিবিদ এবং ট্রেডার এখন দৃঢ়ভাবে ধারণা করছেন যে, ডিসেম্বরে মার্কিন সুদের হার কমানো অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এই প্রত্যাশাই সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মার্কিন ডলারের দরপতনের মূল কারণ।
গতকাল, এমনকি সাধারণত হকিশ বা কঠোর অবস্থানধারী হিসেবে পরিচিত জেপি মরগ্যান চেজ অ্যান্ড কোং-এর অর্থনীতিবিদরাও একটি নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে ফেডারেল রিজার্ভ চলতি মাসে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সুদের হার কমাবে। এর আগে ব্যাংকটির ধারণা ছিল, নীতিনির্ধারকরা জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণগ্রহণের ব্যয় হ্রাসের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেবেন।
ফেডের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলির নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে যে, ফেডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের — বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামসের — স্বল্পমেয়াদে সুদের হার হ্রাসের পক্ষে মন্তব্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে।
পূর্বাভাসে এই ধরনের ঐকমত্য ডলারের ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করছে। বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক অ্যাসেটের রিটার্ন কমার আশঙ্কায় অন্যান্য মুদ্রা ও ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগের স্থানান্তর ঘটাচ্ছেন, যার ফলে মার্কিন ডলারের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই কমছে। এর ধারাবাহিকতায়, স্বর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ মুদ্রার মতো অন্যান্য অ্যাসেটের দাম বাড়ছে, যেগুলো সাধারণত অনিশ্চয়তার সময়ে ডলারের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।
তবে মনে রাখা দরকার, ট্রেডাররা অনেক সময় মূল পদক্ষেপের চেয়ে প্রত্যাশার ওপরই ভিত্তি করে তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। যদি ফেডারেল রিজার্ভ ডিসেম্বরে পূর্বাভাস অনুযায়ী সত্যিই সুদের হার কমায়, তাহলে ডলারের ওপর যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হত তা হয়ত মার্কেটে ডলারের মূল্যের উপর ইতোমধ্যেই প্রভাব বিস্তার করেছে। সেই ক্ষেত্রে মূল ঘোষণা আসার পর অস্থায়ীভাবে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিও পেতে পারে।
তদ্ব্যতীত, সবকিছু নির্ভর করবে ফেডের কর্মকর্তাদের আনুষঙ্গিক বক্তব্যের ওপর। যদি ফেড স্পষ্ট করে যে এটি একটি এককালীন পদক্ষেপ এবং মুদ্রানীতি নমনীয়করণ পদক্ষেপের সূচনা নয় — তাহলে ডলারের মূল্য আবারও বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদিকে, যদি ফেড ভবিষ্যতে সুদের হার আরও হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে ডলারের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে।
ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির ৯ ও ১০ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে বৈঠক আয়োজন করবে। জেপিমরগ্যান পূর্বাভাস দিচ্ছে যে ফেড আগামী মাসে এবং ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে মোট দুইবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদের হার কমাবে।
বিভিন্ন বিবৃতি উল্লেখ করে ব্যাংকটি জানায়, "যদিও ফেডের আসন্ন বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, আমরা মনে করি ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য অনুযায়ী ফেড কমিটি কর্তৃক আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সুদের হার হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা জোরালো করেছে।"
জেপি মরগ্যানের হালনাগাদ পূর্বাভাস এখন সোয়াপ ট্রেডারদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যারা বর্তমানে ফেড কর্তৃক ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা প্রায় ৮০% বলে মূল্যায়ন করছে — যা ঠিক এক সপ্তাহ আগেও ৩০%-এরও কম ছিল।
EUR/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল পরিস্থিতি অনুযায়ী, ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1625 লেভেলে নিয়ে যেতে হবে। কেবল তখনই এই পেয়ারের মূল্যের 1.1655 লেভেলে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হবে। সেখান থেকে মূল্য 1.1680 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, তবে মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি করা বেশ কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1715-এর রেঞ্জ। যদি এই ইনস্ট্রুমেন্টের মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.1590 রেঞ্জে থাকা অবস্থায় উল্লেখযোগ্য ক্রয়ের চাহিদা দেখা যেতে পারে। যদি সেখানেও প্রতিক্রিয়া না দেখা যায়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1560-এর লেভেলে নেমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে কিংবা 1.1530 লেভেল থেকে লং পজিশন ওপেন করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
GBP/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ডের ক্রেতাদের প্রথমে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3230-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেলে নিয়ে যেতে হবে। কেবল তখনই তারা 1.3250 পর্যন্ত মূল্য বাড়ানোর সুযোগ পাবে, যার উপরে ব্রেক করা তুলনামূলকভাবে কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.3270। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের দরপতন হয়, তাহলে মূল্য 1.3200 লেভেলে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা পুনরায় মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ দখল করার চেষ্টা করবে। তাঁরা সফল হলে, মূল্য এই রেঞ্জের ব্রেক করে নিম্নমুখী হলে সেটি ক্রেতাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3177-এর লেভেল পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এমনকি 1.3150 পর্যন্তও দরপতন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।